নীল
আকাশের নীচে সোজা হয়ে
দাঁড়াবার মতো একটা হাড়ও
অক্ষত রাখা হবে না
দেহে।
লেখার
টেবিলের ড্রয়ারে তিনটে চিঠি রেখে এসেছি
আমি।
আমার
থ্যাঁতলানো শরীর এখানে পড়ে
থাকলেও, চিঠিগুলো কিন্তু ঠিক ঠিক জায়গায়
পৌঁছে যাবে।
হয়তো
পৌঁছে গেছেও এতক্ষণে...
চিঠি
১ :
প্রিয়
ভীতু মানুষেরা...
যখন
তোমার সন্তানকে ওরা 'দেশদ্রোহী' বলছিলো,
তখন তুমি চুপ ছিলে।
ভাগ্যকে মনে মনে দোষ
দিচ্ছিলে এমন বেয়াদপ সন্তানের
জিন ধারণের জন্য।
একের
পর এক বাড়ি যখন
ওরা জ্বালাচ্ছিল, তখন নিজের ঘর
বাঁচাতে ইশারায় কাফেরদের ঘর দেখিয়ে দিয়েছিলে।
ভুলে গেছিলে অবিকল তোমার মায়ের মতো দেখতে তার
আম্মির কথা, যে তখন
সেই ঘরেই ছিলো।
আর কতদিন? কতদিন
আর এমনভাবে বাঁচবে? কতদিন সব দেখেও না
দেখে, সব শুনেও না
শুনে কাটাবে? আমাদের মৃতদেহ যখন শেষ বারের
মতো তোমাদের পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হবে,
তখন চুপিচুপি ওর থেকে শিরদাঁড়াগুলো
খুলে পিঠে বেঁধে নিও।
তারপর ঘাতকের চোখে চোখ রেখে,
সংবিধান চোরের উদ্ধত হাতটাকে মুচড়ে ধোরো। দেখবে বাঁচার মতো বাঁচতে জানলে
দিগন্ত সত্যিই সীমানাহীন হয়ে যায়...
চিঠি
২ :
প্রিয়
কমরেড,
আমাদের
মৃতদেহগুলো লুকোনোর জায়গা ওরা খুঁজে পাচ্ছে
না। ওদের ভয় হচ্ছে
আর কিছুক্ষণ এভাবে ফেলে রাখলে দেহগুলো
বুঝি ডিনামাইট হয়ে যাবে। ওরা
বুঝতে পারছে না যে, এভাবে
আমাদের লোপাট করা যায় না।
বিপ্লবের আগুন থেকে আমরা
প্রাণ পাই। উচ্ছেদের মাটি
থেকে শরীর। আগুন আর মাটি
আমাদের আজীবনের দোস্ত। সময় হলো। হরতালে
বসা মুখগুলো আমাদের অপেক্ষায় আছে। পা চালাও
কমরেড। এখনও অনেক কাজ
বাকি...
চিঠি
৩ :
শাসক,
ভয়
দেখিয়ে তুমি যে আসলে
নিজের ভয়টাকেই আড়াল করছো, সেটা এতক্ষণে জানাজানি
হয়ে গেছে। ওরা বুঝে গেছে
তোমার পিঠ দেওয়ালে এসে
ঠেকেছে। তুমি আর কোথাও
নিরাপদ নও। কোনও বিশ্বস্ত
বন্ধু আজ অবধি তুমি
বানাতে পারোনি। তোমার পোষা কুকুরেরাও একে
একে আগুনের আঁচে ঝলসাচ্ছে। এভাবে
এক টুকরো হাড়ের লোভে, তোমাকে মালিক সাজিয়ে রাখতে আর ভালো লাগছে
না তাদের। ওরা আসছে।
তোমার শেখানো ভঙ্গিমায়, নখ আর দাঁত
বার করে ওরা আসছে
তোমারই দিকে। প্রতিবার মরবার আগে আমরা ওদের
মানুষ হতে লোভ দেখিয়েছি।
মাথা তুলে বাঁচার লোভ।
প্রাণটাকে তাচ্ছিল্য ভরে ছুঁড়ে মারার
লোভ। আর তার থেকেও
বেশি প্রতিটা হত্যার শেষে, তোমার হেরে যাওয়া অসহায়
ক্রোধ দেখার লোভ। আমাদের তুমি
পোষ মানাতে পারোনি। কিন্তু ওরা একটু একটু
করে মানুষ হয়ে গিয়েছে। ওই
ওরা আসছে...
শিগগির আয়নার কাছে যাও। দ্যাখো দ্যাখো, হুবহু এমন ভয়টাকেই তো
তুমি দেখতে চেয়েছিলে না আমাদের চোখে
মুখে?
আমরা আসছি....
নাগরিকত্ব
প্রমাণের কয়েকটি ধাপ...
সে পংক্তি আমার নয়।
যে সময় শিশুদের হাহাকারে
শিউরে ওঠে না,
সে সময় প্রাগৈতিহাসিক হয়ে
গেছে।
অপরাধের
বিচার করতে বসে যে
সমাজ ধর্মের কম্পাস বের করে,
সেই
সমাজকে আমি টাইগ্রিসের জলে
ছুঁড়ে ফেলেছি।
উচ্ছেদ,
হত্যা, ধ্বংস দেখেও যে প্রতিবেশী নিশ্চুপ
থাকে,
সেই
যযাতিকে দিয়ে এসেছি আমার
সবটুকু আয়ু।
যে সহযোদ্ধা যুদ্ধের সময় তত্ত্ব আর
তর্কে মাতে,
তাকে
আমি ভিড়ের মাঝেই ফেলে এসেছি।
গুমরে
ওঠা দীর্ঘশ্বাসের হিসেব বারুদে চোকাতে দ্বিধাগ্রস্ত যে বুদ্ধিজীবী,
তার
আস্তিন চিড়ে লুকোনো তাস বের করে
এনেছি জনসমক্ষে।
যখন
ঘর জ্বলছে,
দলিত
পুড়ছে,
বিধর্মীকে
থেঁতলে মারছে ইঁদুরের মতো ঘৃণায়,
পেট
চিরে ত্রিশূলে গাঁথছে ভ্রূণ,
পাড়ায়
পাড়ায় জেগে উঠছে শ্মশান,
তখন
সংযম দেখানো পাপ।
যে শাসক ভয় দেখিয়ে
বাগ মানাতে চায়,
রাত
দুপুরে থার্ড ডিগ্রি চালায়,
তার
হাত দুটো আমি মুচড়ে
ভেঙে দিয়েছি।
মরবার
আগে শেষবারের মতো
চেপে
ধরেছি বিশ্বাসঘাতকের টুঁটি।
একজন
নাগরিক হিসেবে আমি আমার দেশের
জন্য,
আগামীর
জন্য,
এটুকুই শুধু করতে পেরেছি...ছবিঃ অনুষ্টুপ লাই
Bhalo
ReplyDeleteটাটকা,ফুটন্ত কবিতা। ন্যাকামি নেই। বেশ লাগলো। কবিকে শুভে।।
ReplyDeleteভালো লাগলো।
ReplyDelete