-->

গদ্যঃ সৌম্যজিৎ রজক





লকডাউনের বাঁচা : আইসোলেশনে নয়, সংহতিতে 

গত কয়মাস হ’ল, একটি ২৪ তলা বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স বানানো শুরু হয়েছে ব্যাঙ্গালোরে। সবে দুটো তলা তৈরি হয়েছে। এখনও ৪-৫ বছর লেগেই যাবে গোটা প্রোজেক্টটি শেষ হ’তে। সংগ্রাম টুডু, বাড়ি মালদার গাজোলে। কয়েক মাস আগে সেখানে কাজ করতে গেছেন রাজমিস্ত্রি ও জোগাড়ের একটি দলের সাথে। গাজোলেরই সহদেব বিশ্বাস এই বিরাট প্রোজেক্টের জন্য শ্রমিকের যোগান দেন। তিনিই নিয়ে গেছেন এঁদের। যে নির্মাণ সংস্থা (কোম্পানি)-টি এই কমপ্লেক্স বানাচ্ছে, শ্রমিকদের জন্য অস্থায়ী কোয়ার্টার তারাই বানিয়ে দিয়েছে। টিনের চাল আর টিনের দেওয়ালের অস্থায়ী কোয়ার্টারেই এখন দিন কাটছে সংগ্রাম ও তাঁর সহমজুরদের। সব মিলে প্রায় ২০০ জন। প্রয়োজনের থেকে কম হলেও বাথরুম আছে কোনোমতে চালিয়ে নেওয়ার মতো। আরও তিনজন শ্রমিকের সাথে ছোট্ট এক কামরায় সম্পূর্ণ বন্দী এখন সংগ্রাম।
    
 প্রোজেক্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতেই এঁরা ফিরে আসতে চেয়েছিলেন ঘরে। কিন্তু ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় যেটুকু খরচ তা জোটাতে পারেননি। মাত্র চার ঘন্টার নোটিশে বন্ধ হয়ে গেছে পরিবহণ ব্যবস্থাও। লকডাউনের শুরুর দিকটায় নিজেদের পয়সায় স্থানীয় দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে কোয়ার্টারের কমন কিচেনে রান্নাবান্না ক’রে নিচ্ছিলেন শ্রমিকরা। যার কাছে যেটুকু আছে তা দিয়েই বা ক’দিন চলে ? কিছুদিন হ’ল, কন্ট্রাক্টর কিছু রেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যার খরচটা পরে শ্রমিকদের মজুরি থেকেই কেটে নেওয়া হবে এমন শর্তে। এখন দুশ্চিন্তা, কতদিন এই লকডাউন চলবে! এইভাবে চালাতে চালাতে কত টাকা ধার জমে যাবে কন্ট্রাক্টরের কাছে! সেই ঋণ চোকাতে ঠিক কত মাস, কত বছর বিনা মজুরিতেই গতর খাটিয়ে যেতে হবে ! এদিকে কন্ট্রাক্টরই বা কতদিন ধার দিতে রাজি হবে শ’দুয়েক মজুরের দু’বেলা খিদের বিনিময়ে ! দুশ্চিন্তা ফের কবে ঘরে পয়সা পাঠানো যাবে ! কী যে খাচ্ছেন ঘরের লোকেরা, কী যে খাবেন অনির্দিষ্টকাল !

 প্রবাসে ঘাম বিক্কিরি করা সংগ্রাম টুডু, হরেন মুর্মু, সম্রাট বিশ্বাসের মতো শ্রমিকদের দুর্দশা থেকে আপনার জীবন হয়তো দূরবর্তী! কাল দুপুরে ভাতের থালায় ডালটুকু জুটবে কিনা এমন দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলেই না এ লেখা পড়ার ফুরসত পেয়েছেন ! স্মার্টফোনে কিংবা কম্পিউটারে। বলাই বাহুল্য, আমিও আপনার সাথে কথা বলতে পারছি স্মার্টফোন, ইন্টারনেট কানেকশনের সুবিধে পাচ্ছি বলেই। একটি ভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে এই
লকডাউন এক সর্বগ্রাসী সংকটের মধ্যে এনে ফেলেছে আমাদের। আর সেই সংকটকালেও খানিক পড়াশুনো করার অবকাশ আছে বলেই না, খুব সামান্য হলেও, জানতে পেরেছি সংগ্রাম টুডু সম্পর্কে। প্রসঙ্গত, ব্যাঙ্গালোরের কাঙ্গোরি এলাকায় আটকে পড়া প্রবাসী শ্রমিকদের কথা জানিয়েছেন সাংবাদিক-গবেষক রজত রায় তাঁর সাম্প্রতিক এক রিপোর্টাজে। চলতি লকডাউন পর্বে ‘ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ’ প্রকাশিত 'Borders of an Epidemic: Covid 19 and Migrant Workers’ নামের সংকলনটিতে (pdf সংস্করণ) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই রিপোর্টাজটি। সম্পাদনা করেছেন রণবীর সমাদ্দার। অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণভাবেই রজত রায় তাঁর রিপোর্টাজটির নাম দিয়েছেন, 'The Sudden Visibility of Sangram Tudu'! আপাতত এই শিরোনামটির দিকেই একটু মনোযোগী হতে চাইব আমরা। 

সংগ্রাম টুডুর মতোন লোকেরা তো, সত্যি, একেবারে আচমকাই ভেসে উঠলেন এ দেশের মানুষের চোখে! যাঁঁরা জানতেন না এমনও কতজন জেনে গেলেন, এঁদের পোষাকি নাম ‘পরিযায়ী শ্রমিক’। নেহাতই ক্ষুণ্ণিবৃত্তির তাড়নায়, সামান্য রোজগারের তাগিদে ভিটেমাটি পরিজন ছেড়ে যাওয়া শ্রমিকদের এই হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হয়ে ওঠা— ‘দ্য সাডেন ভিজিবিলিটি’— একটা বাস্তব সত্য। এবং এই ‘ভিজিবল্‌’ হয়ে ওঠার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এরচেয়েও নির্মম আরেক সত্যের ব্যঞ্জনা। ‘সাডেন’— ‘সহসা’ শব্দটিতে! এতদিন এই মানুষগুলিকে যে দেখতেই পাইনি আমরা, এঁরা যে সম্পূর্ণ অদৃশ্য ছিলেন আমাদের জগতে— অস্বস্তিকর এই কথাটার একটা স্বীকৃতি আছে এইখানে। যে কথাটা প্রবাসী শ্রমিকদের আজকের ‘ভিজিবিলিটি’র থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় কী? 

 লকডাউনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘিত হচ্ছে ব’লে ভারতবর্ষের মিডিয়া প্রবাসী শ্রমিকদের যে ছবি তুলে ধরল আজ, কাউকে কাউকে তা মনে করিয়ে দিয়েছে একাত্তরের যশোর রোডের কথা। কারোর স্মৃতিতে উস্কে দিয়েছে দেশভাগের পর ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য মানচিত্রের দিকে লক্ষ মানুষের ধেয়ে আসার ছবি। মিল আছে, অমিলও আছে। আজকের ছবিটা ঘর ছেড়ে আসার নয়, ঘরে ফেরার। প্রকৃত প্রস্তাবে ‘ফিরতি অভিবাসন’-এর। রিভার্স মাইগ্রেশনের ! অথচ এই লোকগুলোর ঘর ছেড়ে প্রবাসে যাওয়ার ছবিটা, প্রকৃত অভিবাসনের ছবিটা দেখতে পায়নি কেউ। কোনও মিডিয়া সে'সব দেখায়নি। ঠিক কোন বিপন্নতা উপড়ে ফেলেছিল এঁদের শেকড়? বাধ্য করেছিল ভিন দেশে-প্রদেশে-জনপদে চলে যেতে? খবর পেয়েছে দেশের মানুষ, খবর রেখেছে? 

 বড় বড় শহরের পথে আজ যে সংকট দৃশ্যমান হ’ল সহসাই, সেটা কী আদৌ কোনো শহুরে সংকট ? নাকি তার শিকড় আদতে প্রোথিত রয়েছে এক অভূতপূর্ব গ্রামীণ সংকটের গভীরেই ? নির্দিষ্ট ক’রে বলতে চাইলে, কৃষি সংকটের ! আমাদের গ্রামগুলো কেন একটার পর একটা ফোপরা হয়ে গেছে গত কয়েক দশকে, ফাঁকা হয়ে গেছে ? গ্রামপ্রধান এই দেশের মিডিয়া সে কারণ একবারও জানতে দেয়নি তার উপভোক্তাদের ! কেন গত কয়েক দশক ধ’রে গ্রাম থেকে পাশের গ্রাম কিংবা কাছাকাছি টাউনে, দূরবর্তী কোনো নগরে, মহানগরে, ভিন রাজ্যে, এমনকি ভিন দেশে পাড়ি দিয়েছেন অযুত মানুষ? আজ শ্রমিকদের ঘরে ফেরার যে ঢল দেখছি, তা আসলে এক বৃহত্তর সংকটের ফলাফল মাত্র। অথচ এ ছবি দেখানো হ’ল সংকটের কারণ হিসেবে ! লকডাউনের বিধি লঙ্ঘিত হওয়ার। 

 যে সংকট আমাদের চোখের সামনে সহসাই প্রতিভাত হ’ল, সেটা কি আদৌ ভুঁই ফুঁড়ে ওঠা ? এ প্রশ্ন করা আজ নিতান্ত জরুরি। মাটির ঠিক কতটা গভীরে ছড়িয়ে আছে এর শিকড়, খুঁজে বের করা প্রয়োজন। দেরি হয়ে গেছে, তবু এবার অন্তত। 

 প্রবাসী শ্রমিকদের প্রশ্নটা বিচ্ছিন্ন নয়। লকডাউন অন্যান্য যেক’টা বিপন্নতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মানুষকে, তার কোনটাই কার্যত হঠাৎ তৈরি হওয়া কোনও সংকট নয়। একটি ভাইরাসের অভিযোজিত রূপটুকু ছাড়া। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কথাই ধরা যাক ! দেশের সমস্ত নাগরিককে ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুরক্ষাটুকু দিতে অক্ষম সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই নগ্ন হয়ে পড়া চেহারাটা  কী খুব নতুন কিছু ? আপনিই বলুন ! পরিকল্পনামাফিক স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দ কমাতে কমাতে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে যেভাবে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাকে বেসরকারি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর মুনাফা লোটার মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে, আজ তারই অনিবার্য ফল ভোগ করছি না কী আমরা? এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে মোট যতগুলো হসপিটাল-বেড আছে, তার ৫১%-ই বেসরকারি— এক দিনে দেশ এই খাদের কিনারে এসে দাঁড়ায়নি, নিশ্চয় ! ঠেলতে ঠেলতে তাকে এমন পরিস্থিতির মুখে এনে ফেলা হয়েছে বছরের পর বছর ধ’রে।

 অথবা ধরা যাক, লকডাউনের সময়কার আরেকটি ভয়ঙ্কর দৃশ্যের কথা ! আমরা সকলেই দেখলাম, এই পরিস্থিতিতে কিছু লোক বাজার থেকে কিনে এনে অঢেল খাবার দাবারে উপচে ফেলছে নিজেদের ভাঁড়ার আর উল্টোদিকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছেন অযুত মানুষ। বৈষম্যের এই অশ্লীল বাস্তবতা আজ হঠাৎ গজিয়ে উঠল ? খিদেয় ধুঁকতে ধুঁকতে গোটা একটা দেশ এগিয়ে চলেছে কার্যত দুর্ভিক্ষেরই দিকে— এই গতিপথ আজ সহসা নির্ধারিত হ’ল ? নাকি যে প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে বাজারের ওপর থেকে সমস্ত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে শিথিল করে দিয়ে একদিকে বড় পুঁজির মালিকদের যথেচ্ছ শোষণ ও লুটের পথকে মসৃণ করে তোলা হয়েছে আর অন্যদিকে বেকারত্ব-মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপানো হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর— তারই ক্রমিক পরিণতিতে বৈষম্যের চেহারাটা আজ বেআব্রু হয়ে পড়ল মাত্র ?

 গোটা দেশে মায় দুনিয়াজুড়েই নাকি ‘সম্পূর্ণ লকডাউন’ ! অথচ মুনাফা আহরণে কোনও লকডাউন নেই। লকডাউন নেই শোষণে। লুটে। যেমন জানা যাচ্ছে, এই লকডাউনের পর্বে (এপ্রিলের তৃতীয় হপ্তার মধ্যেই) দুনিয়ার ১০জন বৃহৎ কর্পোরেট মুনাফা করেছেন মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। পরিমাণটা কল্পনা করতে পারছেন? ভারতীয় মুদ্রায় ৪ লক্ষ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা! সেটাও মাত্র ১০ জন লোকের মুনাফা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে! নিশ্চিতভাবেই মুনাফার পাহাড় আরও দীর্ঘ হয়েছে এতদিনে।  আমাজন, ফেসবুক, মাইক্রোসফটের মালিককে নেই মুনাফাখোরের তালিকায়? রয়েছে শ্রীমুকেশ আম্বানি মহাশয়েরও উজ্জ্বল উপস্থিতি। তিনি এই তালিকায় প্রতিনিধিত্ব করছেন এমন একটি দেশের যে দেশে লকডাউনের প্রথম কয়েক সপ্তাহেই কাজ হারিয়েছেন প্রায় ১২ কোটি মানুষ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের হুঁশিয়ারি, লকডাউনের মধ্যেই ভারতে ৪০ কোটি লোক কর্মচ্যুত হবেন। মানে মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগই কাজ হারাবেন, যাঁঁরা আগে থেকেই কর্মহীন তাঁরা তো আছেনই। যে দেশের মোট শ্রমশক্তির সিংহভাগটাই অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত, যে দেশের অধিকাংশ শ্রমিকই চুক্তিভিত্তিক বা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিযুক্ত এবং তার ব্যাপক অংশটা অভিবাসী— সে দেশে কাজ হারানোর বেলাতেও অসংগঠিত ক্ষেত্রে দৈনিক মজুরি বা চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত প্রবাসী শ্রমিকেরাই যে সামনের সারিতে থাকবেন তাতে সন্দেহের অবকাশ আছে কোনো? তাহলে কী ধরে নেওয়া যেতে পারে, হাইওয়ে জুড়ে হাঁটতে থাকা এই শ্রমিকেরা আদতে চিরতরে কাজ হারিয়েই ফিরে আসছেন ঘরে? ওই যে ভোরের আলো ফোটার আগেই মালগাড়ির ভীষণ চাকা যাদের পিষে দিয়ে চলে গেল, বাকি জীবনটা বেকার হয়ে থাকা থেকে বেঁচে গেলেন তাঁরা ? 

 কথাটা মৃত্যু পরবর্তী কোনো বিষয়ে হচ্ছে না। যতদিন বেঁচে ছিলেন এঁরা, ততদিন কীভাবে বেঁচে ছিলেন? রাষ্ট্র, মিডিয়া এমনকি মূলধারায় প্রচলিত কোনো ন্যারেটিভে সেকথা উচ্চারিত হয়েছে কখনো ? অথচ এ অভিবাসন তো চলতে থেকেছে দীর্ঘকাল ধ’রে। অবিরাম গতিতে।

 বস্তুত গ্রামীন জনতার শহরাভিমুখে অভিবাসন— ‘সাডেন’, সহসাই শুরু হয়নি। পুঁজি যবে থেকে, যেভাবে ভূত হয়েছে শিল্প-শহরগুলোতে, সেই তবে থেকে অনুরূপভাবে গ্রামের গরিব মানুষ এসে জড়ো হয়েছেন বড় বড় শিল্প শহরগুলোতে। শ্রমিক হিসেবে। গোটা পৃথিবীর ইতিহাসেই এটা লক্ষণীয়। আমাদের দেশে গোদের ওপর বিষফোঁড়া পুঁজিবাদী বিকাশের অন্যরকম এক গতিপথ। এখানে হাজার বছর ধরে গ্রামের গরিব মানুষ জমির সাথে যে সামন্ততান্ত্রিক শেকলে বাঁধা পড়ে ছিলেন তাকে ছিঁড়ে না ফেলেই বিকশিত হয়েছে পুঁজিবাদ। ফলে গ্রামের শোষিত-দলিত মানুষের বুকের ওপর চেপে বসেই থেকেছে সামন্ততান্ত্রিক শোষণের পুরনো জগদ্দল পাথরটা, যা তাঁদের থিতু হয়ে থাকতে দেয়নি গ্রামে। আর অন্যদিকে জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে কৃষির এক বিকৃত পুঁজিবাদী বিকাশের ফলে। পুঁজির শোষণে। শিল্প পুঁজিও এঁদের টান মেরেছে শহরের দিকে। এদেশে গ্রামীণ জনতার শহরাভিমুখে অভিবাসন, একাধিক কার্যকারণে, চলতেই থেকেছে সেই উনিশ শতক থেকে স্বাধীনতার পরেও।

তথাপি ১৯৯০-এর পর তার মাত্রা বেড়েছে নাটকীয়ভাবে। ১৯৯১ সালের সেনশাস তথ্যের সাথে ২০০১ সেনশাস তথ্যের তুলনা করলেই বোঝা যাবে, এসময় ব্যাপকভাবে কমছে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত মানুষের সংখ্যা। ২০০১-এ দেশে, যেটুকু জানা যাচ্ছে, দেশে মোট অভিবাসী জনসংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৯ লক্ষের কাছাকাছি।  অবশ্য এটি অভিবাসী মজদুরদের সংখ্যা নয়, মোট অভিবাসী মানুষের সংখ্যা। আলাদা করে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যার উল্লেখ করে না সেনশাস। তবে এটা আন্দাজ করাই যায়, জন্মস্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের অধিকাংশ ঘটনা ঘটে রুটিরুজির টানেই। যেমন মহিলাদের ক্ষেত্রে অভিবাসনের একটা বড় কারণ হয় বিবাহ। 

 যাইহোক, ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে ২০১১ সেনশাসের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর। এই প্রথম দেশে গ্রামীণ জনসংখ্যায় হ্রাস দেখা গেল। উল্টোদিকে শহুরে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কিন্তু বহুগুণ বেড়ে গেছে। শহুরে জনসংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ জনসংখ্যার হ্রাস— এই অসামঞ্জস্যের ব্যাখ্যা কী ? রাষ্ট্রীয় আদমসুমারিতে প্রাপ্ত তথ্যের হিসেবেই বোঝা যাবে, এই দশ বছরে (২০০১-’১১) প্রতি ২৪ ঘন্টায় গড়ে ২০০০ জন কৃষিকাজ ছেড়েছেন। এঁরা কৃষিকাজ ছেড়ে কোথায় গেলেন ? হিসেব মিলছে এই দশ বছরে গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন অন্তত ৯ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ। পাকাপাকিভাবে। এছাড়া ছোট শহর থেকে বড় শহরে বা এক মহানগর থেকে অন্য মহানগরে কাজ খুঁজতে যাওয়া মানুষের সংখ্যাটা যোগ করতে হবে। এমনকি গ্রাম থেকে গ্রামে অভিবাসনও আছে। আছে গ্রাম থেকে কাছের কোনো শহরে (হতে পারে ছোট) দৈনিক অভিবাসন। ডেইলি যাতায়াত। মরসুমি অভিবাসন (মূলত চাষের সময়টুকু ছাড়া অন্য সময়ের জন্য গ্রাম ছেড়ে যাওয়া) আছে। হয়তো তিন মাস গ্রামে ক্ষেতমজুরের কাজ শেষে অন্য কোনও গ্রামে গিয়ে মাটি কাটার কাজ কিছুদিন, পরের তিন মাস হয়তো কোনও ইঁটভাটায়, তারপর কোনও শহরে আরও দু’ মাস বাড়ি বানানোর কাজ, তারও পরে কিছুদিন অন্য আরেকটি জনপদে গিয়ে হোটেলের কাজ— এমন অভিবাসনও রয়েছে। কোনও নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই, নির্দিষ্ট পেশা নেই, আয়ের ন্যূনতম কোনো নিরাপত্তা-নিশ্চয়তা নেই এরকম উৎকেন্দ্রিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষের সংখ্যাটাই ব্যাপক। যদিও এঁদের কোনও হিসেব রাষ্ট্র কোনদিন রাখেনি কোথাও। 

 আদমসুমারির তথ্য থেকে ১৯৯০ পরবর্তী প্রথম ২০ বছরের (অসম্পূর্ণ হলেও) একটা ধারণা পেতে পারি আমরা। শেষ ১০ বছরের ধারণা পাব না। ’২১-এর আদমসুমারি তথ্য সামনে এলে সেটা বোঝা যাবে। তবে এই দশকে বীজ-সার-জল-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে চাষের খরচ যে অনুপাতে বেড়েছে, জলসংকট যেভাবে তীব্রতর হয়েছে এবং কৃষিঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো বা ঋণ মুকুব না করা, ফসলের অভাবী বিক্রি ইত্যাদি কার্যকারণে কৃষিকাজ ছেড়ে দেওয়ার গতি যে তরান্বিতই হয়েছে সে কথা সহজেই অনুমেয়। 

                    ভারতে সামন্ততন্ত্রের কাদামাটির ভিতের ওপরে পুঁজিবাদের যে বিকৃত ইমারত গড়ে উঠেছে  তার কথা হিসেবের মধ্যেই রাখতে হবে। কেননা কৃষির পুঁজিবাদী বিকাশের ফলে গ্রামে গ্রামে জন্ম নেওয়া পুঁজিবাদী জমিদারেরা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ শাসক শ্রেণির একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এঁরাই কার্যত তথাকথিত ‘সবুজ বিপ্লব’-এর লাভের গুড়টুকু লুটে খেয়েছিল এবং এঁদের হাতেই কুক্ষিগত হতে থেকেছে বিপুল জমি। বিপরীত মেরুতে জমি হারিয়ে ছোট-মাঝারি কৃষকেরা দলে দলে যুক্ত হয়েছেন ভূমিহীন চাষির দলে। ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশ যে অর্থনৈতিক পথ গ্রহণ করেছে, তার ফল ছিল এই কৃষকদের আরও নির্মম সর্বহারাকরণ।  পুঁজিবাদের এই স্তরে গ্রাম ভারত প্রত্যক্ষ করেছে কর্পোরেট ফার্মিং-এর আগ্রাসী বিস্তার। কৃষিজাত পণ্যের আগাম বাণিজ্য, মুনাফার লোভ জমিতে বিষাক্ত রাসায়নিকের বাধ্যতামূলক ব্যবহার, কৃষিজমি অধিগ্রহণ সহ নানাবিধ নতুন আক্রমণে আক্ষরিক অর্থেই সর্বহারায় পরিণত হওয়া গ্রামীণ জনতা বাধ্য হয়েছেন কৃষিক্ষেত্র ব্যাতীত আয়ের ভিন্ন কোনো উৎসের খোঁজ করতে। ভিড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন শ্রমের মজুত বাহিনিতে। বেকার-বাহিনিতে। 

 গ্রামীণ জনতার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি এই জমানায় জোরালো হয়েছে সঙ্গত কারণেই। সংসদের ভিতরের ও বাইরের দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে একটা সময় চালুও হয়েছে এমএনরেগা প্রকল্প। কিন্তু গত  এক দশকে যেভাবে বরাদ্দ কমানো হয়েছে এই প্রকল্পে তা পরিস্থিতিকে আরও প্যাথেটিক করে তুলেছে। গ্রামে একশো দিনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ২০০৯-’১০ সালে  কেন্দ্র সরকারের বরাদ্দ ৪০,০০০ কোটি টাকার পরিমাণ পরবর্তীকালে মূল্যবৃদ্ধির হারের সাথে সঙ্গতি রেখে বাড়েনি। বরং ২০১৫-’১৬-তে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮,০০০ কোটিতে। শুধু ওই বছরই খাদ্যে ভর্তুকি ছাঁটাই হয়েছে ৫,০০০ কোটি, সারে ২,০০০ কোটি, আইসিডিএস প্রকল্পে ১,৫০০ কোটি। এর ওপর ধাক্কা মেরেছে নোটবন্দি, ভুলভাল জিএসটি। এবং পরবর্তী বছরগুলিতেও গ্রামীণ গরিব মানুষের পেটে লাথি মারার প্রবণতা বাড়তে থেকেছে। কেবল গ্রামেই নয়, শহুরে কর্মসংস্থানও কমেছে অভূতপূর্বভাবে। বেকারির হার স্পর্শ করেছে ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। সব মিলে কাজের সন্ধানে মানুষের ছুটে বেড়ানোর, এক জনপদ থেকে অন্য জনপদে স্থানান্তরিত হওয়ার বেগ বেড়েছে অভূতপূর্ব মাত্রায়। 

 আমরা স্মৃতিকে উস্কে মনে করিয়ে দেব, ১৯৯০ পরবর্তী এই তিনটে দশকেই দেশে প্রতি ৪৫ মিনিটে একজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ফসলের উৎপাদন খরচটুকু তুলতে পারেননি ব'লে,  ঋণের দায়ে। কৃষক আত্মহত্যার এই ভয়াবহ পরিসংখ্যানকে চেপে রাখতে চেয়ে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার গত কয়েকটা বছর ন্যাশনাম ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট প্রকাশই বন্ধ করে দিয়েছে। বাস্তবতা এতটাই হতাশাজনক ! আরেকটি সামান্য তথ্য এই হতাশার গভীরতা সম্পর্কে আভাস দিতে পারবে বোধহয়। ১৯৭০ সালে দেশে কৃষকের জন্য প্রতি ক্যুইন্টালে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল ৭৬টাকা। ২০১৫ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৪৫০ টাকা। ১৯৭০ থেকে ২০১৫— এই ৪৫ বছরে মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ আপনি সহজেই কল্পনা করতে পারবেন। উল্লেখ করতে চাইব কেবল, এই সময়কালে সরকারি চাকুরেদের মাইনে বেড়েছে গড়ে প্রায় ১৫০গুণ। আর কর্পোরেট চাকুরেদের ১০০০ গুণ পর্যন্ত। বিভৎস অসাম্য ! এবং এটাই সাম্প্রতিক ভারতবর্ষের ঝাঁঝালো বাস্তবতা, যা নির্মিত হয়েছে ভারতীয় রাষ্ট্রের গত তিন দশকের আর্থিক নীতি-অভিমুখের দৌলতে। 

 ১৯৯০-এর দশকে ‘সংস্কার’-এর নামে যে অর্থনীতির আমদানি করা হয়েছে দেশে, গালভরা নাম তার ‘নয়া উদারনীতি’। কীসের সাপেক্ষে ‘নয়া’? যেমনটা চলছিল তার (অর্থাৎ ‘কল্যাণকর রাষ্ট্র’-এর ধারণার) সাপেক্ষে। কাদের প্রতি ‘উদার’ ? দেশের অধিকাংশ খেটে-খাওয়া এবং খেটেও খেতে-না-পাওয়া মানুষের প্রতি নয়। উদারতা বাজারের প্রতি। অর্থাৎ বাজারকে নিয়ন্ত্রণ ক’রে যারা, তাদের প্রতি। আরও সহজ ক’রে বললে, যার যত টাকা তার প্রতি ততটা উদার। এমনই ব্যবস্থা। এমনই নীতিতে চলেছে দেশ গত তিনটে দশক। সেই নয়ের দশক থেকেই তো কার্যত ভারতবর্ষ চলতে শুরু করে আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজি নির্দেশিত পথে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার ও বিশ্বব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে। 

সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের ফর্মুলা মেনেই নতুন চেহারা নিতে থাকবে বাজার, রাষ্ট্র ও নাগরিকের ত্রিকোণ সম্পর্ক। বাজারকে ‘মুক্ত’ করার তাড়নায় বাজারের ওপর থেকে তুলে নেওয়া হবে তাবৎ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আর ঝেড়ে ফেলা হবে নাগরিকদের সামাজিক কল্যাণের রাষ্ট্রীয় দায়দায়িত্ব— এই হ’ল এ ব্যবস্থার আঁতের কথা। পুঁজিবাদের এই স্তরে রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ হ'ল জনগণের সমস্ত সম্পদ লুঠ ক’রে কর্পোরেটকুলের পায়ে সঁপে দেওয়া। ‍আনন্দবাজারে অভ্যস্থ পাঠক ভুরু কোঁচকালেও অস্বীকার করতে পারবেন না। কেননা রাষ্ট্রের নীতি-অভিমুখ তো ভিন্নতর কোনো সাক্ষ্য দিচ্ছে না। 

আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির সাথে গাঁটছড়া বাঁধা কর্পোরেটদের দেদার ‘লেটার অব আন্ডারটেকিং’ দিয়ে যাবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কগুলো, গরিব চাষিকে ঋণ দিতে চাইবে না সহজে। ‘ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্কক্রাপসি’র নামে মুকুব করা হবে অতি-ধনীদের লক্ষ কোটির অনাদায়ী ঋণ, কৃষকদের ঋণ মুকুব করবে না সরকার। পুঁজিবাদের কাঠামোগত কোনও সঙ্কটের কারণে শিল্পপতিদের সামান্য লোকসান হ’লেই ‘বেইল আউট’ পদ্ধতিতে সেই লোকসান পুষিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। আর লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলোকে তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। অর্থাৎ একদিকে লোকসানের রাষ্ট্রীয়করণ হবে আর মুনাফার হবে বিরাষ্ট্রীয়করণ। কৃষ্ণা গোদাবরী নদীর অববাহিকা আম্বানিকে কিংবা মধ্যপ্রদেশে ৭৮০ হেক্টর ঘন জঙ্গল আদানিকে দিয়ে দেওয়া হবে জলের দরেই। পাঁচ বছরে ৭ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা কর ছাড় দেওয়া হবে কর্পোরেট পুঁজির মালিকদের আর পাবলিকের কাছ থেকে আদায় করা হবে জ্বালানি তেলের দামে যুক্ত প্রায় ৪৬% কর। ভর্তুকি কমে যাবে, উঠেই যাবে গরিব মানুষের রেশনে। কেরোসিনে, রান্নার গ্যাসে। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য খরচ করতে পারবে না জিডিপি-র ১.২%-এর এক পয়সা বেশি। দিতে পারবে না তাদের কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি, কাজের নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা। আর পরিণামে দিনে ৩০ কোটি টাকা কামাবে এক আম্বানি ভাই একা। দেশের ৭৬% পরিবারের কালঘাম ছুটে যাবে মাসে মাত্র ১০,০০০ টাকা আয় করতে। 

               হাতে গোনা কিছু মানুষের হাতে সম্পদের এই ব্যাপক পুঞ্জীভবন আর বিপরীত মেরুতে জমাট দারিদ্র্য জনসংখ্যার বিপুল অংশের মধ্যে। পুঞ্জীভূত হ’তে থাকা শ্রমের নিদারুন যন্ত্রণা, দুর্দশা, হতাশা, অবসাদ আর জীবনের অকল্পনীয় এক বিপন্নতা থিতু হয়ে থাকতে দিতে চায় না মানুষকে নিজের মাটিতে। শ্রমশক্তির বেপরোয়া অভিবাসনের গভীরে যে সংকটের শেকড় তা কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অভিঘাত নয়। নয় কোনো অলৌকিক দেবতার অভিশাপ। এমনকি কোনো ভাইরাসের সংক্রমণের দিকে তর্জনী উঁচিয়েও লাভ নেই। রাষ্ট্রের নীতি-অভিমুখের কারণেই আজ আকালের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে গোটা দেশকে। আমাদের। শ্বাসরোধী এ পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, আর ভ্যানতাড়ার ফুরসত নেই হাতে।

এই বেলা সাফ সাফ উচ্চারণ করা প্রয়োজন সম্পদের পুনর্বন্টনের দাবি। ধকুবেরদের ওপর কর্পোরেট কর ও সম্পদ কর উভয়ই আরোপ করে বিপুল জনতার সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বাড়াক সরকার। সার্বজনীন রেশনিং, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে। জনতার আয় বাড়ানোর জন্য, সঞ্চয় সুনিশ্চিত করতে। রাষ্ট্র নিশ্চিত করুক ফসলের নায্য সহায়ক মূল্য। শ্রমিকের নায্য ন্যূনতম মজুরি। স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সমকাজে সমান মজুরি। সমান মজুরি নারী, পুরুষ, অন্য লিঙ্গের শ্রমিকের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি অবিলম্বে আদায় করুক কর্পোরেটদের অনাদায়ী ঋণ। মুকুব করুক গরিব চাষিদের দেনা। রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প সংস্থাগুলোর বেসরকারিকরণ মানেই দেদার ছাঁটাই, আরো বেকারত্ব; তাই সিয়ারিং উল্টো দিকে ঘোরাতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের সমস্ত শূন্যপদে স্থায়ী নিয়োগ। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এমএনরেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১০০-র বদলে ২০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি। গ্রামের সাথে শহরেও। 

 এই অভিমুখে নীতিগত পরিবর্তনই পারে শ্রেণি শক্তির ভারসাম্যে জরুরি বদল ঘটাতে।  জনসংখ্যার সিংহভাগ মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় যা আজ অনিবার্য। এতদিন পর্দার আড়ালে ঢেকে রাখা মানুষগুলো ধুমকেতুর মতোন দেখা দিলেন যখন, এতদিন দেবে রাখা কথাগুলোই বা এক্ষুণি উচ্চারিত হবে না কেন সোচ্চারে?

            শ্রেণি শোষণে যখন লকডাউন নেই, শ্রেণি চেতনাই বা থাকবে কেন কোয়ারেন্টাইনে?

* ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহীত

1 comment:

  1. ভালো। খুবই ভালো যুক্তিপূর্ণ লেখা।

    ReplyDelete

একটি লড়াকু পত্রিকা সম্পাদকমণ্ডলীঃ   অভিজিৎ   ঘোষ ,  অনির্বাণ সরকার ,  এয়োনিয়ান   অনির্বাণ ,  সুমিত পতি ,  মনোহর হোসেন ...