-->

কবিতাঃ যশোধরা রায়চৌধুরী




কোয়ারান্টাইন কবিতা

ছোট্ট একটা গোল জানালা দিয়ে
জলের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি
চল্লিশ দিন জলের ওপর একা
পাড়ে আমার ভিড়বে না আর তরী?

একটাদুটো ফাঁক কি ফোকর দিয়ে
মানুষ শুধু আটকে থাকার দিনে
দেখছে বাহির, দূরে তীরের ছায়া
মিলিয়ে যাচ্ছে পাড়ের আশা, শক্ত মাটি বিনে

ছোট্ট একটা ঘুলঘুলি, তার ফুটোয়
চড়ুই এনে ফেলছে কুটোকাটি
আমিও আছি তৈরি এমন দিনে
গুছিয়ে আমার কয়েক ঘটিবাটি

তল্পি তল্পা গুছিয়ে রেখে দিয়ে
বসে আছি পাড়ের কড়ির আশে
আমি এবং আমার একাকিতা
অপেক্ষাতে আছেই , আশেপাশে

একটাদুটো বেড়াল বেড়ায় চরে
ডাকলে ভাবি ডাকছে প্রিয়জনে
ভাত ছড়ালে ভাবি এটাই তবে
আত্মীয়তা :  হাহাকারের ঘরে

সাদা দেওয়াল, চৌকো দেওয়ালেরা
নির্বীজ আর পরিচ্ছন্ন করা
এ কোয়ারান্টাইনে ছায়া পড়ে
কোন্‌ স্মৃতি আর কোন্‌ কামনায় ভরা

ছোট্ট একটা পুঁটলি বেঁধে রাখি
জলের ঢেউকে দেখতে দেখতে কাঁদি
কবে আমায় পাড় মেলাবে বলো
কবে আমার নিকেশ হবে আঁধি

আমাকে ওই জাহাজঘাটা থেকে
নিতে আসবে ফুলকুড়নো লোক
যেদিন আমি পা রাখব মাটিতে
ভুলেই যাবে পৃথিবী তার শোক

 
 জাহাজের পাটাতন স্বপ্নে দেখা দিল
সরু আর নড়বড়ে সেই তক্তায়
হেঁটে হেঁটে নেমে যাব শক্ত মাটিতে
আপাতত জল শুধু দোলা দেয় তাকে

স্বপ্নে এল বাড়ি আর স্বপ্নে এল ঘর
চড়ুই পাখির আনা কুটোয় নশ্বর
জাহাজের খোল ফুটো হয়ে গেছে যেন
তবু এই আঘাটায় আটকে আছি কেন

জাহাজের খালাসিরা স্বপ্নে দেখা দিল
হাতে নিয়ে হারিকেন একলা বসে থাকি
যদি এক পাটাতন স্থলদেশে জোড়ে
এই জলদেশ থেকে তবে ফিরে যাব

আপাতত জাহাজের দুলুনিতে বাঁচা
গা-বমি গা-বমি লাগে, স্বাদ নেই, কাঁচা
খাবারের স্বাদ আমি পাইনি কতদিন
দাঁতে কেটে রাখি শুধু শুকনো চিঁড়েমুড়ি

এক সরু সেতু আজ স্বপ্নে দেখা দিল
কে যেন বাড়িয়ে দিল সকরুণ হাত
আমার দেশের মাটি স্বপ্নে দেখা দিল
বাকি সব উবে যাওয়া , দুঃস্বপ্ন, মায়াহীন রাত।

ছবিঃ অনুষ্টুপ লাই

1 comment:

একটি লড়াকু পত্রিকা সম্পাদকমণ্ডলীঃ   অভিজিৎ   ঘোষ ,  অনির্বাণ সরকার ,  এয়োনিয়ান   অনির্বাণ ,  সুমিত পতি ,  মনোহর হোসেন ...