পাহাড়ি
ইস্তাহার
হামদের
শিল্প আছে পাহাড়ে, বনে,গরাম থানে
ইস্কুলে
যাঁয়ে শিল্প শিখতে নাই হয়।
যখন জোসনা রাইতে পাহাড়ের মাথায় থালার রকম চাঁদ উঠে
তখন
হামদের বুকের ভিতরে একটা পোকা মুচড়ে উঠে।
গোটা
বন ঝরঝর বর্ষায় যখন গান গাহে
তখন
ময়ূর গিলা বুকের ভিতরলে বেরাই আসে-
ইটা
কী শিল্প লয় বাবুরা!
আর
কবিতা,গান!
হামদের
যে ঝরনা গুলা গুনগুন করে উটা গান লয়,কবিতা লয়?
মদ
খাঁয়ে পাহাড়ি মেয়াদের যৌবন উপভোগের ডাক দিয়াই
তাহলে
শিল্প?
শুন্
বাবুরা ঐ কালো শরীরগুলার দিকে বিষ নজর দিলে
একটাও
ডাঙ ভুঞে পড়বেক নাই
শনশন
করে বাতাসের রকম ছুটতে থাকবেক তীর।
শরীর
বিকে হামরা খাই নাই।
অযোধ্যা
পাহাড়ের রকম মাথা উঁচায় বাঁইচে থাকব।
যতদিন
বাঁইচে থাকব টাঙ্গিটা উঁচায় থাকবেক-
হামরা
ঘাম ঝঁরায় বাঁচি,ইজ্জত ঝঁরায় লয়।
হঁ
হামরা কাঠ বিকি,পাত বিকি,শরীর লয়।
আর
কাঠ যেমন কাটি,পূজাও করি-
করম
পূজা,গরাম পূজা।
এই
বন পাহাড়েই ত হামদের মা বাপ।
জাহের
থানেই জীবনটা বাঁধা থাকে।
পাহাড়ের
মনখারাপ হামরা বুঝি।
হামরা
বনের কাঁদনা শুনতে পাই।
আরও
নকি তরা ডেম বনাবি,
বিজলি
টাইনে আনবি পাহাড়ের বুকের ভিতরলে
তদের
ঘর আলোয় ঝলমল কইরে উঠবেক
ঘটরঘটর
করে কারখানাগুলা রাতকে দিন কইরবেক।
তদের
ছেলামেয়ারা নেশা লাগা আলোয় উড়ে বুলবেক
পতনির
পারা!
আচ্ছা
বাবুরা,হামদের পাহাড়ের দিকে
তদের
এত কুনজর লাগাস কেনে?
কই
হামরা তো বলি নাই টাউন ভাইঙ্গে
আবার বনকে ঘুরায় আনো!
বনটাকে
সিঁরায় দিলে হামদের ছেলাগুলা
আড়বাঁশি
বাজাবেক কন গাছ তলটায়?
জোসনা
রাতে কন গাছের তলে নাচব হামরা মেয়া মরদ?
শুন্
বাবু যে যেমন ডাহিন তার জন্যে তেমন মন্ত্র জানা আছে।
শুন্
বাবুরা, পাহাড়ের চাটানির রকম বুকটা তাইতে উঠেছে,
পিছাতে
পিছাতে এখন পাহাড়ের কিনারটায় পৌঁছায়ছি,
আর
লয়,আর লয়।
কাঠ
কাটা কুড়ারগুলা ইবার আরো শক্ত করে ধরে আছি
বনঝাড়ের
ভিতরলে শাঁ শাঁ কইরে তীর ছুইটে আসবেক
জোসনা
রাতে আসর তাতায় যে ধামসাগিলা
উগলা
গরজে উঠবেক হাতির রকম
আর
হামরা হুলা লিয়ে লাতড়াব
হাতি
ঠাকুরকে লয়,হাতি ঠাকুরকে লয়
তরাকে
জঙ্গলের সীমা পার কইরে দিঁয়ে আসব...
তোমার শহর থেকে
আমার বুকের ভেতর লুকিয়ে আছে একটা ডাকবাক্স
পুরনো,রং-চটা
সন্ধ্যা হলেই ঠিকানাহীন একগুচ্ছ চিঠি সেখানে জমা হয়
আমি সন্তর্পণে ঢাকনা খুলে ফেলি
পশ্চিমের বারান্দায় বসে থাকি চিঠির গোছা হাতে
এক একটা চিঠি হেসে ওঠে
উড়ে যায় টুক করে প্রজাপতির মতো
সেদিন চিঠি এল তোমার শহর থেকে
নিয়ন বাতির মতো রং চুঁইয়ে পড়ছে তার শরীর থেকে
আমি উঁকি মেরে দেখি,একরাশ মনখারাপ জমাট বেঁধে আছে
খামের ভিতর
চিঠিরা মিনমিন করে বলে
ভালো নেই তোমার শহর
অশোক
বিষাদভূমির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ তুমি
ঠোঁটে ঝুলে নেই জয়ীর উল্লাস
নিজের ক্লান্ত ছায়া টেনে টেনে চলেছ অনন্তকাল
দীর্ঘ হয়ে উঠছে বসন্তের বিকেল
আকাশের বুক ফেটে বেরিয়ে আসছে
সূর্যাস্তের আলো
শস্যের বুকে জন্ম নিচ্ছে দুধ
ফুলে ফুলে ভরে উঠছে মধু
মানুষের বুকে জন্ম নিচ্ছে ভালোবাসা
এক-মুখ পরাগ মেখে
পরজন্ম থেকে তুমি হেঁটে আসছ
এই সন্ধ্যার দেশে
একটি বিতর্কিত চিত্র
ক্যানভাসের উপর ঝুঁকে পড়েছেন গণেশ পাইন
বামপাশে রাখা পাত্র থেকে দলার পর দলা রং তুলে
লেপে দিচ্ছেন ক্যানভাসের উপর
আর আঁকিবুকি, কাটাছেঁড়া চলছে
ক্যানভাসের উপর তুলি বুলিয়ে
কী আঁকছেন গণেশ পাইন
চাঁচরের বেড়ার পাশে খুঁটিতে বাঁধা একটি চতুষ্পদ
ঘাস বিচালি চিবোচ্ছে
বালতি হাতে হাঁটু মুড়ে খাটো ধুতি ও ফতুয়া
একপাশে চকচকে চোখের মানুষদের লাইন
চাঁচরের বেড়ার অন্যপাশে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে
হাড় জিরজিরে কেষ্ট পুত্তুর
কী আঁকছেন গণেশ পাইন
ছবিঃ অর্ণব নন্দী
ছবিঃ অর্ণব নন্দী
No comments:
Post a Comment