-->

গদ্যঃ অচিন্ত্য মাজী



রবীন্দ্রনাথ ও অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা  : একটি তুলনামূলক অধ্যয়ন

রবীন্দ্রনাথের বিশাল প্রতিভার তাপ থেকে  নিজেদের সযত্নে বাঁচিয়ে ভিন্ন কোনো অভিযাত্রায় উত্তরিত  হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা থেকেই  আধুনিক বাংলা কবিতার পথ চলা শুরু হয় এ দিক থেকে আধুনিক কবিরা সময়ের আলোড়িত অগ্নিগর্ভ বিক্ষুদ্ধ পরিবেশ, জীবনের প্রচণ্ড সংকুলতার ভেতরে মনন ও চৈতন্যের রেখাপথটিকে নিরীক্ষণ করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে এবং অমিয় চক্রবর্তী  এই পাঁচজন ব্যক্তিকেই আধুনিক বাংলা কবিতার নাবিক ধরা হয় এই তালিকাটিকে বাড়িয়ে এখন সমালোচকেরা প্রেমেন্দ্র মিত্র, অজিত দত্ত প্রমুখের নামও করেন বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্র ঐতিহ্য ও বোধের ক্ষেত্রে এই আধুনিক কবিদের আকাশ পাতাল তফাৎ জীবনের বিপর্যস্ত ভূমিটিতে দাঁড়িয়ে এঁরা কোনোদিনই স্থিরতার স্পর্শটিকে ছুঁতে পারেন নি প্রখর আত্মকেন্দ্রিক, অস্তিত্বের প্রশ্নে নিয়ত দোদুল্যমান, জায়মান সময়ের পাদপীঠে দাঁড়িয়ে বিচ্ছিন্নতার হাহাকারে ধ্বস্ত হয়ে আন্তর্মানবিক নানা বিভাজনের গ্রাসে মগ্ন হয়েছিলেন এর ফলে যে ধৈর্য এবং সংযম রবীন্দ্রনাথকে দেখিয়েছিল অহর্নিশি চঞ্চলতার বিপরীতে কোনো দূরতর শান্ত আলোর বাঁধন আধুনিক কবিরা স্বভাবের অন্তর্নিহিত তাড়নাতেই ঐ সুরলোকে নিশ্চিত অবগাহন করতে পারেন নি তাঁরা পেয়েছিলেন গভীর অন্ধকারে লালিত আত্মার আস্বাদ, চৈতন্যের কোনো জটিল উৎস হতে অনির্বাণ বেদনার মন্থন  কবিতা তাই এঁদের কাছে অবিশ্বাস, ধ্বংস, নির্বেদ আর ভ্রান্তির পাঠকৃতি

কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কি সবার ক্ষেত্রেই সত্য?  আধুনিকতার আগ্রাসন এমনই  দুর্দান্ত আর  মোহময়ী, মুখরোচক আর চিকন যে কোনো কবি নিরন্তর ভিন্ন সাধনা করে গেলেও ঐ হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে ভেসে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না প্রতিষ্ঠান পুষ্ট সমালোচকেরা তখন সহজেই বলে ফেলতে পারেনআধুনিক কবিদের মধ্যে অমিয়  চক্রবর্তীর কবিমানস সর্বাপেক্ষা জটিল ও দ্বিধাবিভক্ত আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে তিনি এ যুগের প্রধান আধ্যাত্মিক কবিরবীন্দ্রনাথের মিষ্টিক চেতনার একমাত্র উওরাধিকারী কিন্তু এজরা পাউণ্ডের mask এর মতো এ তাঁর ছদ্মবেশ মাত্র‘’ ( আধুনিক বাংলা কাব্য পরিচয় – দীপ্তি ত্রিপাঠী) । কিন্তু অমিয় চক্রবর্তীর আধ্যাত্মিকতাকে আধুনিকতার ছদ্মবেশ দিয়ে বিচার করা চলে না তাঁর শান্তির স্থিতি ছিন্নমূল নয় বরং সারাজীবন ধরে যে আলোর সন্ধান করে গেছেন  তাতে আধুনিকতার সমস্ত  প্রতাপ আহত হয়ে নেতিয়ে পড়ে নির্জীব শ্লথ এবং হিংস্র মননের তিনি কোনোদিন চর্চা করেন নি, পাঠকের সঙ্গে হেঁয়ালিভরা দূরত্ব সৃষ্টি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধ, নেতি এবং নৈরাজ্যের প্লাবনে ভাসা তাঁর কোনোদিনই কাম্য ছিল না, বরং গহন গভীর কোনো একাগ্রতায় তিনি ডুবে যেতে চেয়েছেন বারবার, ধুলিমাটির অতলে সেঁধিয়ে যেতে চেয়েছেন, ধ্যানের সমাধিতে নিজেকে নির্মল শান্ত আনন্দশ্রীতে ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁর কবিতায় খুঁজে পাই আমরা চিরকালীন ঐতিহ্যের ঈশারাকে সময়ের দানবিক চেহারা একে দগ্ধ করতে পারে না, ক্লিষ্ট আধুনিক যাতনাময় বোধ থেকে এ বহু দূরে বরং আমরা খুব সহজেই রবীন্দ্র বোধের কাছাকাছি তার কবিতাকে নিয়ে যেতে পারি  নম্র উপস্থাপন, সরলতা, সৌকুমার্য আর সৌন্দর্যের চলন যেন গীতাঞ্জলির আন্তরিকতায় গাঁথা  ধ্যানের সহংতি বৈদুর্য মণির মতো ভেতর থেকে ঠিকরায় অন্তর্গত রক্তের কল্লোল নয়  অন্তর্গত আস্তিক্যচেতনার আগুনে তিনি পুড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন বিভ্রান্তি আর আক্রোশ এবং এই শক্তি তিনি পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছেই বিদেশের যে স্থানে যে ভাবেই তিনি থেকেছেন ঘরে ফেরার ডাক তাঁকে নিরন্তর পীড়িত করেছে রবীন্দ্রচেতনা থেকে দূরে নয় বরং রবীন্দ্রচেতনা থেকে সাহস শক্তি আর প্রত্যয় নিয়ে তিনি যাত্রা করতে পেরেছেন সার্বভৌম মানবিক জিজ্ঞাসায়, জীবনের বিচিত্র তরঙ্গে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন


অমিয় চক্রবর্তী প্রথম রবীন্দ্রনাথকে দেখেন প্রমথ চৌধুরীর বাড়িতে মে ফেয়ার বালিগঞ্জে। এরপরই প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে তিনি শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। ঠিক এই সময়েই অমিয় চক্রবর্তী জ্বরের প্রকোপে পড়েন। অমিয় চক্রবর্তীর সমস্ত জড়ত্ব ভেঙে রবীন্দ্রনাথ এক মুহূর্তেই তাঁকে আপন করে নিয়েছিলেন। শান্তিনিকেতনের ছায়াঘেরা বাড়ি, শালবনের হাওয়ার শব্দ, ঘন সবুজ নাম না জানা লতা আর সন্ধ্যায় গানের সুরের অপ্রাকৃত স্পর্শে অমিয় চক্রবর্তীকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করেছিল, এই মাটি পৃথিবীর বিচিত্র প্রাণের প্রকাশকে খুব গভীরভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

বিশ্বভারতীতে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর সুগভীর আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সদ্য বি.এ. পাশ করা এক যুবকের বিশ্ব ভারতীতে  সংযুক্ত হওয়ার একাগ্র ইচ্ছা রবীন্দ্রনাথকে খুশি করেছিল। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহেই শান্তিনিকেতনে আমলকি বীথির কাছে মহর্ষির তৈরি একটি বৃহৎ বাড়ির ছোট্ট ঘরে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। পরে ‘সবুজ ঘর’ থেকে তিনি কোনার্কে স্থানান্তরিত হন। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাশ করার পর রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব পদে মনোনয়ন পান। বিদেশী চিঠিপত্রের উত্তর দান, কবিতা কপি করা, পাণ্ডলিপি তৈরি করা, ইন্টারভিউ পরিচালনা করার পাশাপাশি শান্তিনিকেতনে আগত বিদেশী জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিত্বদেরও দেখাশোনা করতে হত। এই সুবাদেই স্টেলা ক্রামরিশ, উইনটারনিৎস, ভি লিসনি, রেনোয়া, আর্দ্রে কার্পেলস, বগদানভ, গেরমানুষ, সিলভা লেভি, বাকে দম্পতি, এডওয়ার্ড টমসন, স্টেন কোনো, কলিনস, তুচি প্রমুখদের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। শান্তিনিকেতনে থাকার সুবাদেই মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ প্রতিমাদেবীর পালিতা কন্যা নন্দিনীকে ফরাসী ভাষা শেখানোর জন্য ডেনমার্কের মেয়ে হিয়োর্ডিস সিগোকে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগেই অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে হিয়োর্ডিসের বিবাহ হয় ১৯২৭ এর ডিসেম্বরে। কন্যা সম্প্রদান করেন দীনবন্ধ এণ্ড্রজ। রবীন্দ্রনাথ হিয়োর্ডিসের নতুন নাম রাখেন হৈমন্তী।

বার্মিংহামের নিকটবর্তী সেলিওখ উডব্রূক কলেজে আধুনিক আন্তর্জাতিকতা বিষয়ে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ পান ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দে। রবীন্দ্রনাথও তখন ইউরোপ যাচ্ছিলেন। অমিয় চক্রবর্তী সস্ত্রীক ওনার সঙ্গ লাভ করেন। এই সফরে রবীন্দ্রনাথ আতিথ্য নিয়েছিলেন লেনার্ড এলমহার্স্ট এর শিক্ষা সংস্কৃতি কেন্দ্র ডার্টিংটন হলে। রবীন্দ্রনাথ উডব্রকে অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করে যান। অমিয়-হৈমন্তির তিনদিনের শিশুকন্যার নামকরণ করেন ‘সেমন্তী’। এই সময় মিউনিখের কাছে মার্গাড নদীর ধারে oberammergan নামক গ্রামে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অমিয় চক্রবর্তী একটি নাটক দেখার সুযোগ পান কবির সঙ্গে ডেনমার্ক এবং জার্মানীর নানা জায়গায় ভ্রমণ করার সুযোগ হয় বার্লিনে আইনস্টাইনের সঙ্গে এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে টমাস মানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগের মূলে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর কয়েক সপ্তাহের মস্কো ভ্রমণের সঙ্গী হন অমিয় চক্রবর্তী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হুভারের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অমিয় চক্রবর্তীও ছিলেন ভ্রমণ করেন ফিলাডেলফিয়া ও বস্টন ফিরে আসেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেই এক জাহাজে সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও শিশুকন্যা এর দেড় বছর পরে রবীন্দ্রনাথ যখন পারস্য ও মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ করেন তখনও সে যাত্রায় সঙ্গী হন অমিয় চক্রবর্তী ভ্রমণ করেন ইরাক, ইরান ও আফগানিস্থান

রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য ও স্নেহ, ব্যক্তিত্ব ও আন্তর্জাতিক মন অমিয় চক্রবর্তীকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিলএকমুঠোকাব্যটি তিনি রবীন্দ্রনাথকেই উৎসর্গ করেন আধুনিক বিদেশী সাহিত্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও অমিয় চক্রবর্তীর মধ্যে প্রচুর আলোচনা হত রবীন্দ্রনাথকে ইউরোপীয় চিন্তাধারা ও পাশ্চাত্য আধুনিক সাহিত্য সম্পর্কে নিরন্তর কৌতুহল যুগিয়ে রেখেছিলেন অমিয় চক্রবর্তী অমিয় চক্রবর্তীর অনুরোধে রবীন্দ্রনাথআফ্রিকাকবিতাটি লেখেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখা বই অমিয় চক্রবর্তীকে উপহার দিয়েছেনরোগশয্যায়কাব্যগ্রন্থে তিনি অমিয় চক্রবর্তীকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেন-
অকৃত্রিম তোমার মিত্রতা
তোমার বুদ্ধির বিচিত্রতা,
ভূয়োদর্শনের তব দান
বন্ধুত্বেরে করে মূল্যবান

রবীন্দ্র সান্নিধ্যই  অমিয় চক্রবর্তীকে জীবন ও পৃথিবীকে প্রেম ও চৈতন্যের সহজ গভীর দৃষ্টি থেকে দেখতে শেখায় আধুনিক জীবনবোধ ও লাঞ্ছনার বিপরীতে তিনি অর্জন করে নিতে পেরেছিলেন সৌন্দর্যময়, মৃত্তিকালগ্ন এক অভিজ্ঞান রবীন্দ্রনাথের নিরন্তর স্নেহস্পর্শ আর বিরাট মানবিকতার ঔদার্য অমিয় চক্রবর্তীকে মুখোমুখি করেছিল আস্তিক্যচেতনার ভূমিটিতে শান্তিনিকেতন তাঁর জীবনে শান্তি, প্রীতি ও কর্মের সুগভীর মধুর বাঁধন রচনা করেছিল-
                      শান্তিনিকেতনে
স্ফটিক আকাশ রোজ প্রভাতী ছড়ায় দেহে মনে
                সুগন্ধি বেলায়
নীলান্তর দিকে দিকে খুলে যায়
                           শাল বীথিকায় বৈতালিক
চলন্ত সুরের মন্ত্র ঘরে ঘরে দেয় প্রাথমিক,
রবীন্দ্রনাথের গানে আনন্দের ভাষা
                        তাই দিয়ে শুরু হয় সমস্ত দিনের যাওয়া আসা
                                                                                            উদয়ন, দূরযানী

শান্তিনিকেতনের এই মৃদু মধুর প্রীতিময় আন্তরিক জীবন স্পন্দন কবিকে সারাজীবন আচ্ছন্ন করে রেখেছিল ছিন্নমূল ত্রিশঙ্কু জীবনের বিরুদ্ধে তিনি এই সুরের ধারাতে অভিষিক্ত হয়েই শান্তির বিশুদ্ধ ধারায় সত্তাকে অভিযোজিত করতে পেরেছিলেন অমিয় চক্রবর্তীর ব্যক্তিত্ব ও মনন গঠনের মূলে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ভূমিকে স্পর্শ করে থাকাই ছিল অমিয় চক্রবর্তীর প্রত্যয় এইদিক থেকে তিনি যথাযথ ভাবেই রবীন্দ্রনাথের উত্তরসাধক উজ্জ্বল, নির্মল, শান্ত, মধুর, নীরব জীবনের বীক্ষা তিনি পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেই রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে তাই তাঁর প্রণাম
সেই পুরাতন জ্যোতি
         কবি তাঁর জানান প্রণতি
                    চেতনা উদয় অন্তহীন
-       যন্তদ্বেদ স বেদ
হৃদয়ে ধরেন সমাসীন
প্রকাশিত সূর্য কোটি লোকে
            উদ্ভাসিত দেখেন আলোকে   
                                                                             উৎসর্গ, ঘরে ফেরার দিন,

এই যে আধ্যাত্মিক জ্যোতির প্রকাশ যা ব্যক্তিত্বের গভীর থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে চিরমানবের স্পর্শে সবুজ হয়ে উঠেছে তা আসলে রবীন্দ্র মনীষারই ভিন্ন রূপায়ন এই অভিজ্ঞান থেকেই কবি জেগে ওঠেন সভ্যতার ব্যাধি ও ক্ষত নিরাময় করে সমকালীন নানা অন্যায় অত্যাচার, ধর্ম নিয়ে নানা মত্ততা ও মুর্খামি, ঈর্ষা ও হিংসার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছেন
সভ্যতা পেতেছে খুব জাঁক করে লাল সালু
রক্তের, সদ্য হাঁটে তাতে নষ্ট বীর, নেচে নেচে;
হঠাৎ উন্মাদী উপত্যকা বেয়ে চালু
ধ্বংস হিংস্রতার ….                                                    লক্ষণ, অভিজ্ঞান বসন্ত
এই কবিতাটির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে ইচ্ছা হয়
আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে
প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস
            যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল-
                       অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল,
                                        এসো যুগান্তের কবি
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
              দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে
                           বলো ক্ষমা করো
                                         হিংস্র প্রলাপের মধ্যে
সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পূণ্যবাণী
                                                                                 আফ্রিকা, শ্যামলী

আধুনিক কবিতায় প্রতিবাদ এমনভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অন্তর্ঘাত ও দহনের বিরুদ্ধে  সার্বভৌম মানবিকতার বাণীতে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠে নি অমিয় চক্রবর্তী রবীন্দ্রবোধে দীক্ষিত হয়েই স্তব্ধতার ভেতর দ্রোহের পরম শিখাটিকে ছুঁতে পেরেছিলেন প্রতিবাদের সুর তাঁর কবিতায় খুব চড়া নয় বরং বিদ্রোহের বলিষ্ঠ উচ্চারণের ভেতর  যে রহস্যময় সূক্ষ্ম আনীল স্পর্শ মননকে আঘাত করে ক্রমশ ভিন্ন অবলোকনের দিকে নিয়ে যায় অমিয় চক্রবর্তী সেই চর্চায় নিরন্তর নিয়োজিত ধ্যানের শুভ্র উজ্জ্বল বিচ্ছুরণে সমস্ত কোলাহল আর ভ্রান্তি অতল স্তব্ধতায় ডুবে যায়, মহাজাগতিক পরম্পরার ভেতর কবি আবিষ্কার করেন এমন এক পরাদৃষ্টিকে যেখানে জড়িয়ে আছে সন্ধানের তীব্র আকুলতা, অস্তিত্বের এক সামগ্রিক খোঁজ
ধান করো, ধান হবে, ধুলোর সংসারে এই মাটি
                         তাতে যে যেমন ইচ্ছে খাটি
বসে যদি থাকো তবু আগাছায় ধরে বিন্দু ফুল
হলদে- নীল তারি মধ্যে, রুক্ষ মাটি তবু নয় ভুল-
ভুল থেকে সরে সরে অন্য কোনো নিয়মের চলা,
কিছু না-কিছুর খেলা, থেমে নেই হাওয়ার শৃঙ্খলা,
সৃষ্টি মাটি এই মতো                                                               মাটি, পারাপার

অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা অমানবিক সমস্ত মুখরতাকে নিঃশব্দে আড়াল করে একটি শুদ্ধ বেদনার উপস্থিতিকে লালন করে, শীতল শান্ত সর্বব্যাপী একটি বার্তাকে চিরদিনের কোমল পল্লবটির সঙ্গে একাকার করে তাঁর কবিতা একই সঙ্গে বর্ণময় আর বর্ণহীন ধরিত্রীর শুদ্ধ বুকের রঙে নিষ্ণাত হয়ে তাঁর কবিতা এগিয়ে যায় এক বর্ণহীন অবাঙমানসগোচর স্ফুটনের দিকে এই মহাযাত্রায় অলৌকিক বিস্ময় চুপ করে থাকে, পৌরুষের রুদ্র ভৃঙ্গার সেখানে উচ্চশির হলেও নতমুখী বৈরাগ্যের কোমল ঋজু উত্তরীয় জড়িয়ে ধ্যানাসীন, রবীন্দ্রনাথের কবিতাতেও প্রেমের ব্যাপ্তির ভেতরে আশ্চর্য নিরাসক্তি সর্বদাই চিরনতুনের আহ্বানে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে অনিঃশেষ এই অন্বেষণ ক্রমনিবিড় উৎসর্জনে আরো মৌলিক রবীন্দ্র কবিতায়
কল্লোল্মুখর দিন
          ধায় রাত্রি পানে
উচ্ছল নির্ঝর চলে
         সিন্ধুর সন্ধানে
বসন্তে অশান্ত ফুল
        পেতে চায় ফল
স্তব্ধ পূর্ণতার পানে
        চলিছে চঞ্চল                                                                         স্ফুলিঙ্গ

এখানে এমন এক ভালোবাসার রঙ আছে যা সবকিছুকে রঙিন করে তোলে অথচ নিজে থাকে রঙহীন পরিবর্তনের এই ভেতরকার স্রোত নানারূপ বদল ও ভঙ্গিমা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাপৃথিবীর নিঃশব্দ বলয়ে গতির এমন নিগূঢ় লালন  অমিয় চক্রবর্তীর কবিতার মূল প্রেরণা
জ্বালানি কাঠ জ্বলো
জ্বলতে জ্বলতে বলো
        আকাশতলে এসে
আঙার হল আলো
আঙার হল আলো
          পুড়ল কাঠের কালো
           পুড়ল কাঠের কালো
                   নীল সন্ধ্যার শেষে                              দীপাবলী, ঘরে ফেরার দিন

একটি নতমুখী নীরব ঋজু আলোর অপরূপ পাপড়ি মেলা, তারই পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়া ভেসে যাওয়া মিশে যাওয়ার গভীর আকুলতা যেন ক্রমশ স্নিগ্ধ নিষ্পাপ দহনকে বুনে চলা, দহনের ভেতরের মন্ত্রে তৃতীয় নয়নের অবাক উত্তোলন অবুঝ নীরব দ্যুতিটি ঘন কালোর অতল থেকে উঠে এসে বিরহীর আরতি মন্ত্রে একাকার হল চির অচেনার কোলে  পারাপারকাব্যেরপিঁপড়েকবিতায় দেখি আত্মময় এক উদ্ভাস আর্দ্র চৈতন্যের স্তব্ধ তটে এসে দাঁড়ায়
আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুক
                       কেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা
                       স্তব্ধ শুধু চলায় কথা বলা
                       আলোয় গন্ধে ছুঁয়ে তার ঐ ভূবন ভরে রাখুক
আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ধুলোর রেণু মাখুক  
                                                                                          পিঁপড়ে, পারাপার

আমরা দেখতে পাচ্ছি নিজের ভেতরে বুঁদ হয়ে গিয়ে একাগ্র অভিনিবেশে পরম তৃপ্তিকে অন্বেষণ করছে যে সত্তা অন্তর্লীন অহং দূর করতে পেরেছে বলেই এমন এক অমোঘ জাগরণ তার শরীর ভরে উদগত হয়ে আসে সে প্লাবনের মন্ত্র জানে না কিন্তু ভিজে যাওয়ার স্পর্ধায় সমস্ত আত্মরতিকে মুচড়ে দিতে পারে, এখানে যে আত্মতা আছে তা বৃহৎ প্রাণের আয়োজনের ছন্দে ধ্বনিময়, অসীমের জাগরণে স্পন্দিত ছোট পিঁপড়েটি তার ব্যস্ত মধুর চলা নিয়ে, চলার অন্তর্গত বাকশক্তিতে নিষিক্ত হয়ে সমস্ত বিশ্ব দৃষ্টিকেই সে ভরে রাখে আপন হৃদয় মাঝে ছোট পিঁপড়ে ধুলোর রেণু মেখে নিঃশব্দ প্রত্যয়ে ভূমি ও ভূমার অন্বেষণ করে

অমিয় চক্রবর্তীর যে ধর্মটি রবীন্দ্রনাথের একেবারে কাছাকাছি তা হল তাঁর ভ্রামণিক মন এখানে ভ্রমণ বলতে বিজনেস ক্লাসে বিশ্ব ভ্রমণ নয়, এ হল ভূমার পরিব্রাজন শিকড়ে মাটিতে চৈতন্যকে সংলগ্ন করে মহাজাগতিক বোধে তাকে নিষিক্ত করা মাটির কাছে ফিরে আসার, নাভিকে শিকড়ে জড়িয়ে রাখার তুমুল প্রণোদনা উৎসারিত হতে দেখি তাঁর প্রজ্ঞাময় মানস থেকে মানুষের প্রতি যে নিবিড় টান সভ্যতার পৈশাচিক উল্লাস আর ছিন্নমূল উন্নাসিক জীবন দর্শন থেকে তাঁকে বারে বারে মঙ্গল চেতনায় উজ্জীবিত করেছে তা হল তাঁর গভীরতর মৃত্তিকা সংসক্তির বোধ জন্মভূমির মৃত্তিকা রস নাভিতে জড়িয়েই তিনি অচেনা পৃথিবীর ডাকে সাড়া দেন, অচেনা বিশ্বে গিয়েও তাই তিনি নিজ দেশ মাতার গুঞ্জনে গেঁথে দেন নতুন দেখার উদ্ভাসকে বারবার পৃথিবী ঘুরলেও ঘরে ফেরার প্রচণ্ড টান তাঁকে অহরহ উতলা করে তাঁর চেতনায় যে কসমিক জিজ্ঞাসা মাঝে মাঝেই প্রদীপ্ত হয়ে ওঠে মাটির গভীরে মিশে থাকা লাবণ্যে তার উত্তর তিনি পেয়ে যান
গিয়েছি শিকড় বেয়ে নামি
মাটির নীরবে এসে থামি
ভূমিকায়                                                                               নামাওঠা, খসড়া

আমরা দেখতে পাই তাঁর শিকড় সংযোগ কতখানি গভীর বিরাট আকাশে তিনি উড়তে পারেন মাটিতে চেতনা আশ্লিষ্ট থাকে বলেই এবং এই চেতনার অর্জন ঘটেছে রবীন্দ্র সান্নিধ্যের কারণেই মানুষকে ভালোবাসাযে সুষমা নরম হয় অন্তরে , জন্ম হয় আশ্চর্য গন্ধের সেই অমলতার কাছে নতজানু থাকতে চেয়েছেন কবি চিরকাল
বাড়ি কুয়োতলা, ক্ষেত, নদী, নাম ডাকা
গায়ের চাদক পালী গোরু, চেনা গাছ, ওদের কাজ, সব নিয়ে
স্তরে স্তরে সোনার সংসারের তলে, আছি মিলিয়ে                         
                                                                                           সংসার, একমুঠো

পল্লী প্রকৃতির সরল সবুজ উদ্ভাসের সঙ্গে এভাবে জীবনকে মিলিয়ে নেওয়ার আততিতে সৃষ্টি হয় আত্মবিস্মৃতির বিরুদ্ধে পথ চলা রবীন্দ্রনাথও তো এইভাবেই নাগরিক রুক্ষতা আর ভীড় থেকে দূরে মৃত্তিকার সবুজ গন্ধ জড়িয়ে নিয়েছিলেন কবি চেতনায়-
               এই মাঠ এই রাঙা ধুলি
    অঘ্রাণের রৌদ্রলাগা চিক্কণ কাঁঠাল পাতাগুলি,
          শীত বাতাসের শ্বাসে
         এই শিহরণ ঘাসে
                       কী কথা কহিল তোর কানে
            বহূদূর নদী জলে
            আলোকের রেখা ঝলে
      ধ্যানে তোর কোন মন্ত্র আনে                                পসারিনি, বিচিত্রিতা   

রবীন্দ্রবোধে যেমন প্রাচ্য তথা ভারতীয় দর্শন এক বিরাট গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এসেছিল  অমিয় মানসেও দেখি ভারতীর ঐতিহ্যের নিবিড় পরম্পরার প্রতিফলন শাশ্বত মানব জীবন ধ্যানের গভীর তাৎপর্যে ভিন্ন মাত্রা পায় অমিয় কাব্যে
যাই ভিজে ঘাসে ঘাসে বাগানের নিবিড় পল্লবে
স্তম্ভিত দীঘির জলে স্তরে স্তরে আকাশে মাটিতে ।।
অন্ধকার বর্ষাদিনে বৃষ্টি ঝরে জলের নির্ঝরে
গতির অসংখ্য বেগে, অবিশ্রাম জাগ্রত সঞ্চারে, স্বপ্নবেগে
সঞ্চালিত মেঘে মাঠে, কম্পিত মাটির অনুপ্রাণে
গেরুয়া পাথরে জলে পড়ে অরণ্য তরঙ্গশীর্ষ মাঠে
ফিরে নামে মর্মজল সমুদ্রে মাটিতে
সৃজনের অন্ধকারে বৃষ্টি নাম বর্ষা জলধারে                              বৃষ্টি, একমুঠো

এইভাবে মগ্ন একাগ্র ধ্যানীভূত হয়ে অন্তরকে সিক্ত করে নেওয়া কখনোই আধুনিক মানসের নিকটবর্তী নয় এখানে একটি শুদ্ধ সত্তার জগতের নিরাভরণ মৌনতায় ডুব দেওয়ার  কথা আছে অদ্ভুত এক স্পর্শে, জাগরণে কবির চৈতন্য ভিজে যাচ্ছে , আর একের পর এক খুলে যাচ্ছে হৃদয়ের সবকটি দরজা, ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে মেকী মুখোশ, বিকৃতির আয়োজন একটি না বলা মৌন নীরব তৃপ্তি সৃষ্টির আগ্নেয় অনুরাগে পুঞ্জ পুঞ্জ হয়ে পাখা মেলছে ভেতর থেকে, অবসন্ন কবন্ধ বাস্তবের চতুরতাগুলিকে ছিঁড়ে পৌঁছে দিচ্ছে মোহহীন আবিষ্কারের দিকে অমিয় চক্রবর্তী নির্জনে লালন করে চলেন সেই অপ্রাকৃত লাবণ্যকে, প্রেমের অন্তর্গত মন্থনকে মিলিয়ে পড়ি রবীন্দ্রনাথ
আমারে ডাক দিল           কে ভিতর পানে
             ওরা যে ডাকতে জানে
আশ্বিনে ওই শিউলি শাখে       মৌমাছিরে যেমন ডাকে
              প্রভাত সৌরভের গানে
      ঘরছাড়া আজ ঘর পেল যে
               আপন মনে রইল মজে
হাওয়ায় হাওয়ায় কেমন করে     খবর  যে তার পৌঁছল রে
   ঘরছাড়া ঐ মেঘের কানে                                                          গীতবিতান

রবীন্দ্রনাথকে যে ভেতর থেকে ডাক দেয় অমিয়কে সেই আসলে ভেতর থেকে ভিজিয়ে তোলে, প্লাবনের নিজস্ব রভসে বিদীর্ণ করে বাঁধন সৃষ্টির এই উৎসার তো ভারতীয় কাব্য দর্শন প্রসূত যাঁরা শিল্পী তাঁরা ঐ আহ্বানের অপেক্ষায় , ভিজে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন অতি সাধারণ কোনো বিষয়ও তখন দৃষ্টির জাদুতে অসাধারণ হয়ে ওঠে
প্রকাণ্ড বন প্রকাণ্ড গাছ
বেরিয়ে এলেই নেই
ভিতরে কত লক্ষ কথা, পাতা পাতায়, শাখা শাখায়
সবুজ অন্ধকার;
জোনাকী কীট, পাখি পালক পেঁচার চোখ বটের ঝুরি
ভিতরে কত আরো গভীরে জন্তু চলে হলদে পথ
ভিতরে কত মিষ্টি ফল, তীক্ষ স্বাদ ফুলের তীর
ইচ্ছে ভরা বুনো আঙুর, জামের শাঁস,
ভিতরে কত দ্রুতের ভয়, কখনো বেলা সময়হীন
বেরিয়ে এলেই নেই                                   বৈদান্তিক, পারাপার

পৃথিবীকে,প্রকৃতিকে দেখার আনন্দ এবং বিস্ময়, সঞ্চার আর শিহরণ প্রবল ভালোবাসা হয়ে, চরম মন্ত্র হয়ে সত্তায় নিয়ে আসছে আশ্চর্য সাড়া কবিতাটিতে আছে একটি অরণ্যের প্রসঙ্গ যে অরণ্যের ভেতরে লক্ষ কথা, পাতায় পাতায়, শাখায় শাখায় সবুজ অন্ধকার আছে জোনাকী কীট , পাখি পালক, পেঁচার চোখ, বটের ঝুরি, তারো গভীরে হলদে পথে জন্তুদের যাতায়াত অথচ এখান থেকেবেরিয়ে এলেই নেই আসলে এই বন রবীন্দ্র কথিতবৃহৎ আমিযা সমগ্র  সার্বভৌম জগৎ নিয়ে বাঙময় সবাইকে নিয়েই এর প্রকাশ কোনো কিছু বাদ দিলে এর পূর্ণতা নষ্ট হয় এই অরণ্যের বোধ তাই সমগ্রতার বোধ সমগ্রতা থেকে বার হয়ে এলেই অরণ্যকে আর অরণ্যের মতো করে পাওয়া যায় নাকবি চেতনাকেও এইভাবে মানবতার অখণ্ড বোধ থেকে বিযুক্ত করে নিলে যথার্থ চৈতন্য জন্ম হয় না অমিয় চক্রবর্তী বিশ্বভূবনে বিরাজ করেও সংসারের স্রোতোধ্বনিকে মর্মরিত করে তোলেন আপন প্রাণের ছন্দে মাটির অন্তরাল জুড়ে চিরদিন বেজে চলে যে সত্তার সামূহিক উত্থানের সঙ্গীত তার কাছেই কবি রাখেন শেষ প্রণতি
 কচি ঘাস, মাঠ, পাশে জল
    বসুধা তোমার আঁচল
         এখানে বিছাও-
মাথা রেখে শোবো আর দেখবো উধাও
          মেঘে মেঘে চলে নীলাকাশ;
                   শেষ করে দূর পরবাস
     ফিরে আসি ধরিত্রীর ছেলে,
মাটি, তুমি নাও বুক মেলে                                                 আঁচল, অমরাবতী

 রবীন্দ্রনাথও এমনি ভাবেই শেষ জীবনে মাটির গানে মুখর হয়েছেন বৃহত্তর জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েই জীবন রহস্যের অলৌকিক প্রকাশকে আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন অমিয় চক্রবর্তীর কবিতাও জীবনের ভেতরেই বসবাস করে আর জীবনকে অতিক্রম করে মহাজাগতিক সাধনায় অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা যেন সেই শঙ্খধ্বনি যা পাড়াগাঁর পিটুলিগোলা তুলসি তলায় ধ্বনিত হতে হতে, পল্লীর রঙে রসে আটপৌরে চঞ্চলতায় নিষিক্ত হয়ে কখন যে ধ্যান ও প্রজ্ঞার বৈদান্তিক অভিজ্ঞানে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তা টেরই পাওয়া যায় না ধ্বনি শেষ হয়ে গেলেও গুনগুন করে আরতির শিখাটুকু শান্তির অনিঃশেষ ছায়াশ্রয়ে

ছবি গুগ্‌ল থেকে সংগৃহীত





                                                                                                                                                   

No comments:

Post a Comment

একটি লড়াকু পত্রিকা সম্পাদকমণ্ডলীঃ   অভিজিৎ   ঘোষ ,  অনির্বাণ সরকার ,  এয়োনিয়ান   অনির্বাণ ,  সুমিত পতি ,  মনোহর হোসেন ...