-->

আমাদের কথা: মজদুর হুঁ, মজবুর নেহি




ট্যাপ ঘুরছে। জল এই পড়ল বলে! বুকের ছাতি ফাটছে তেষ্টায়। ট্যাপ এখনও ঘুরছে। একটু দাঁড়ান। এই জল পড়ল বলে!

প্রতিশ্রুতি অনবরত বুদবুদ কাটছে। এই জল পড়ল বলে! ততক্ষণ হাঁটতে থাকুক আত্মনির্ভর ভারত, পরিযায়ী শ্রমিক, তার বস্তায় ঠাসা জীবন নিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোলে-কাঁখে করে। আর পরিযায়ী পাখিদের মতো উড়ে উড়ে দেশের মাটিতে নামতে থাকুন ইন্ডিয়ার বাসিন্দারা। চোখ মুখ হাসিতে ঝলসে দিয়ে তাঁরা বলে উঠুন, 'বন্দে ভারত!'

কিন্তু সেই ভারত এখনও হাঁটছে। ২৫ মার্চ লকডাউনের প্রথম দফা শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয়, তৃতীয় দফা পেরিয়ে বার চতুর্থ পর্যায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে শ্রমিক স্পেশাল চলছে। ইন্ডিয়ার জন্য অবশ্য এসি প্যাসেঞ্জার। কিন্তু সবে তাঁদের হাঁটায় ছেদ পড়েনি। কারণ ট্রেনে জায়গা হয়নি অনেকের। ঠিক যেমন এই ভারতের জায়গা হয়নি ইন্ডিয়ার মানচিত্রে। তাই ছত্তীসগঢ়ের জামলো মকদম, মধ্যপ্রদেশের শকুন্তলা হাঁটছে। পাশে রয়েছে মুজফফরপুরের সন্তোষ, যে চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ পাবে চাকরি করে। রয়েছে মথুরাপুরের ফিরদৌস,  মুম্বইতে হেড মিস্ত্রির জোগানদার। এই রাস্তাতেই হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ রেখে এগচ্ছে ভারত। শ্রমিকের ভারত। তাঁদের ঘাম-রক্তে কাদা হয়ে যাচ্ছে অ্যাসফাল্টের রাস্তা। নতুন বীজ বপনের জমি তৈরি হচ্ছে সেই ভারতে। ট্যাপ কিন্তু এখনও ঘুরছে। এখনও বেরিয়ে আসছে অসংখ্য শূন্য।

সেই ভারতের সামনে এখন অনন্ত রাস্তা। সে পথে যাঁরা হাঁটছেন তাঁদের কারও টার্গেট পাঁচশো কিলোমিটার, কারও এক হাজার কিলোমিটার কারও বা দেড় হাজার! ক্ষিদেয় পেট জ্বলছে, জ্বলুক। তেষ্টায় ছাতি ফাটছে, ফাটুক। তাঁদের বুক চিরে বেরিয়ে আসা গরম রক্ত ঠান্ডা করে দিচ্ছে পিচ গলা রাস্তাটা। ট্যাপ এখনও ঘুরছে, জল হয়তো এখনই পড়বে। ইন্ডিয়া নয়, আসলে ভারত জেনে গিয়েছে, সরকারি নল বেয়ে বেরিয়ে আসা উন্নয়নের ওই অনন্ত শূন্য কখনই তাঁদের মতো দিকশূন্যপুরের বাসিন্দাদের পথ চলার কম্পাস হয়ে উঠতে পারবে না। কত প্রকল্প এল, কত গেল। তা হলে এত দিন ধরে তাঁরা হাঁটছেন কেন? কেন যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতার জন্য স্পার্টাকাসদের হাঁটতে হয়? সবের উত্তর নেই। উত্তর মিলবেও না। শুধু সামনে হেঁটে যেতে হবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।

ট্যাপ কিন্তু এখনও ঘুরছে। ঘুরতে থাকবে জোরে। আরও জোরে। হয়তো এক দিন  কয়েক বিন্দু জল নল বেয়ে টুপ করে খসে পড়বে রুখা সুখা বেহড়ে। ভারতের ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া পা ভিজনোর আগেই তা উবে যাবে বাতাসে। তখনও হাঁটবে ভারত। লক্ষ্য তার অনেক দূর।  যেখানে সব শূন্য বসে সংখ্যার ডান দিকে। খিদে আর তেষ্টা দিয়ে গড়া কড়া ইমিউনিটির বর্ম বুকে এঁটে স্পার্টাকাসের মতোই আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে ওঁদের ভারত। ট্যাপ ঘুরছে ঘুরুক। সরকারি নল থেকে জলের তীক্ষ্ণ ফলা বা আগুন বুলেট, যাই বেরিয়ে আসুক তাতে পরোয়া নেই ওই সব যোদ্ধাদের। এ ভাবেই চলতে চলতে জীবনের চাকাটাই এক দিন ঘুরিয়ে দেবেন ওঁরা।


ছবিঃ অনুষ্টুপ লাই

8 comments:

  1. সময়োচিত ঘুম ভাঙানো সম্পাদকীয়!

    ReplyDelete
  2. Durbaar gati abyahata

    ReplyDelete
  3. তীব্র সত্য কিছু কথা...এড়ানো যায় না বলেই এড়ানোর ভান করি রোজ।

    ReplyDelete
  4. অসাধারণ হৃৃৃৃৃদয়বিদারক মর্মস্পর্শী সম্পাদকীয়!সাফল্য কামনা করি৷

    ReplyDelete

একটি লড়াকু পত্রিকা সম্পাদকমণ্ডলীঃ   অভিজিৎ   ঘোষ ,  অনির্বাণ সরকার ,  এয়োনিয়ান   অনির্বাণ ,  সুমিত পতি ,  মনোহর হোসেন ...