আমোদিত
মায়বাখ ( Maybach) জার্মানির একটি কোম্পানি, গাড়ি বানায় আবার বাহারি রোদচশমাও বানায়।
মোভ্যাডো ( Movado) আমেরিকার একটি সংস্থা যারা শৌখিন হাতঘড়ি বানায়।
মঁ ব্লাঁ ( Mont Blanc) হল ফরাসি কলম বানানোর কোম্পানি।
বায়ারিশে মোটরেন ভ্যারকে ( ইংরেজি উচ্চারণে বাভারিয়ান মোটর ওয়র্ক্স, আরও সহজ উচ্চারণে BMW ) জার্মানির একটি বহুজাতিক সংস্থা যারা বিলাসবহুল মোটর গাড়ি ও বাইক তৈরি করে।
আর এই সবগুলিই যিনি কোনও-না-কোনও সময়ে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করেন তিনি ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাধিক্যে ক্ষমতাবান ব্যক্তি, খুব সম্প্রতি যিনি আপামর ভারতবাসীকে আত্মনির্ভরতার পাঠ শোনালেন।
এই কথাটি যখন এক ভার্চুয়াল আড্ডাগোষ্ঠীতে পেড়েছিলাম, এক ভক্তজন বলে উঠলেন, " আহা, ওসব বিদেশি ব্র্যান্ড তো ওঁর ব্যক্তিগত শখের জিনিস, এর পেছনে অন্য কারণ খুঁজতে যাবেন না। যেহেতু ওঁর নামে ' ম ' আছে , ' এম ' অক্ষরের প্রতি তাই হয়তো ব্যক্তিগত টান আছে। খেয়াল করে দেখুন, যেসব বিদেশি ব্র্যান্ডের কথা তুললেন, তাদের সবেতেই ' এম ' আছে ! "
এই ব্যাখ্যা দিয়েই তিনি আড্ডাপীঠ ছেড়ে গেলেন। তাঁকে আর বলা হল না, মিথ্যাতেও তো ' ম ' আছে মশাই !
অবিশ্যি বলেও কোনও লাভ হত না, ভক্তি যেখানে প্রবল, যুক্তি সেখানে ঝাপসা। তবে এসব বাণী শুনলে কিন্তু বেশ আমোদিত হই। অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতালাভের আশায় উন্মুখ হয়ে থাকি।
" লোকাল কে লিয়ে ভোকাল " হতে গেলে সবার আগে বিদেশি দ্রব্য বর্জন করতে হবে। পরাধীন ভারতে জন্মাননি বলে যাঁরা এতকাল আক্ষেপ করে আসছিলেন, তাঁদের সামনে দেশভক্তি প্রমাণের সুবর্ণ সুযোগ আগতপ্রায়, বিদেশি দ্রব্য সপাটে ও সমূলে বর্জন করুন।
তবে কিনা ১৯০৫ সালের সেই বঙ্গভঙ্গের আবহে কৃষ্ণকুমার মিত্রের ' সঞ্জীবনী ' পত্রিকায় ব্রিটিশ পণ্য বয়কট ও স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহারের আবেগমথিত আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশবাসী যখন সোৎসাহে বিলিতি কাপড়, লবণ, চিনি,সিগারেট, পুতুল,কাচের চুড়ি বয়কট করতে শুরু করলো, রাশিরাশি বিলিতি কাপড় পুড়িয়ে দেওয়া হল আগুনে, তখন লড়াইটা ছিল মূলত একমুখী, ব্রিটিশদের দেশের তৈরি দ্রব্যের বিরুদ্ধে।
আর সে ছিল এক উত্তুঙ্গ উন্মাদনা পর্ব ! কে তাতে শামিল না-হয়েছিল ! পূজারি বামুন বিলিতি চিনির মিষ্টি ঠাকুরকে দিতে অস্বীকার করে, ধোপারা বিলিত কাপড় কাচবে না,বঙ্গনারী রেশমি চুড়ি আর পরল না, ম্যানচেস্টার মিলের মিহি কাপড়ের বদলে তাঁতের মোটা কাপড় পরতে শুরু করল, ছেলেপুলেরা বেরিয়ে এল ইংরেজের স্কুল-কলেজ ছেড়ে। সারা দেশ মথিত হতে লাগল বয়কটের সেই জোয়ারে।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পরে স্বদেশী আন্দোলনের কালে দেশের নেতারা বুঝেছিলেন, কেবল বিলিতি দ্রব্য বর্জন করেই কাজ মিটে যাবে না। দেশীয় শিল্প ও উৎপাদন ব্যবস্থার প্রসার দরকার। ফলে একে-একে দেশীয় কাপড়ের কল, ব্যাঙ্ক, জীবনবীমা কোম্পানি,গেঞ্জি, মোজা, চিনি, চামড়া, সাবান প্রভৃতি কারখানা গড়ে উঠল। সাধারণ মানুষও ক্রমশ দেশীয় পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেল।
কিন্তু এখন এই একবিংশ শতকের যৌবনে ভারতের মতো দেশে একা চিন-ই তো প্রায় সব খেয়ে বসে আছে। তাহলে এখনকার লড়াই কি মূলত চিনা দ্রব্যের বিরুদ্ধে ?
বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, মানুষ জীবনধারণের একটা নির্দিষ্ট মানে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার থেকে আর নীচে নেমে আসতে পারে না। আরাম, আয়াস, সুযোগসুবিধার ধর্মই হচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী, নিম্নমানের সঙ্গে আপোষ করা খুব কঠিন ব্যাপার।
তো এইরকম এক ভারতবর্ষে আবার নতুন করে আত্মনির্ভরতার অভ্যাস গড়ে তোলার কাজে প্রথম চ্যালেঞ্জটাই হচ্ছে চিন-কে টেক্কা দেওয়া।
যে-ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন একটু-একটু করে হোর্ডিংশোভিত করা হয়েছে কিংবা আরোগ্যসেতু অ্যাপ-এর পরামর্শ ঢালা হচ্ছে দিনরাত, সেই অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য দেশবাসীর হাতে মজুত চিনা প্রযুক্তিধন্য স্মার্টফোনের সমতুল্য সম্পূর্ণ দেশীয় যন্ত্রাংশ তথা প্রযুক্তিজাত মোবাইল ফোন প্রস্তুত করে দেখাক তো কোনও স্বদেশী সংস্থা ! তারপর নাহয় বাকি সব পণ্য হবে।
সপনো কা সওদাগরের কাছে এটাই হোক প্রথম চ্যালেঞ্জ !
* ছবি গুগ্ল থেকে সংগৃহীত
* ছবি গুগ্ল থেকে সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment